উত্তাল কাজিরাঙা। বিক্ষোভকারীদের হঠাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। সোমবার পিটিআইয়ের ছবি
উচ্ছেদ ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কাজিরাঙা। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় মৃত্যু হল এক ছাত্রী-সহ দু’জনের। জখম প্রায় তিরিশ জন।
কাজিরাঙা লাগোয়া বান্দরডুবি, দেওচুর চাঙ ও পালখোয়া গ্রামে জবরদখলকারীদের ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কংগ্রেস সরকারের আমলে কাজিরাঙায় উচ্ছেদ চালাতে গিয়ে গ্রামবাসী ও কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির বাধায় পিছু হঠেছিল প্রশাসন।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ছিল— অগপ সরকার বসতি গড়তে তাঁদের সেখানে জমি দিয়েছিল। বান্দরডুবির সংখ্যালঘু পরিবারগুলির ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। তাঁরা বনের জমি জবরদখল করেননি, বরং কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষই জঙ্গলের আয়তন বাড়িয়ে তাঁদের গ্রাম গ্রাস করছে। উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন কৃষকমুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ। তিনি জানিয়ে দেন, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য সময় না দিয়ে উচ্ছেদ চালাতে দেওয়া হবে না। কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভ ও মিছিল চলছিল।
আজ সকাল থেকে পোষা হাতি, জেসিবি, রোলার নিয়ে বনবিভাগ উচ্ছেদ শুরু করে। ৩৮১টি পরিবারের বাড়ি ভাঙা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জিনিসপত্র নিয়ে সরে গেলেও বান্দরডুবিতে বহিরাগত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অন্য গ্রামবাসীরা রাস্তা আটকান। পুলিশের দিকে ইট-পাথর ছোঁড়া হয়। পুলিশ লাঠি চালায়। কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছোঁড়ে। পরে বিক্ষোভকারীরা পিছিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে আঞ্জুনা খাতুন (১৬) ও ফকরুদ্দিন (২৬) নামে দু’জনের মৃতদেহ মেলে। ১৪ জন পুলিশকর্মী-সহ অনেকে জখম হন। আঞ্জুমা কুঠরি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। গ্রামবাসীরা অ্যাম্বুল্যান্স থেকে মৃতদেহ নামিয়ে পথ অবরোধ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ডিআইজি অখিলেশ সিংহ জানান, পুলিশ রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। মৃতদের দেহে গুলির ক্ষত নেই।
এ দিকে ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তরুণ গগৈ, পূর্বতন গগৈ সরকারের বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা জানান, রাজ্য সরকারের এই বলপ্রয়োগ অন্যায়। বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের সময় না দিয়ে উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি। গগৈয়ের আমলেই হাইকোর্ট উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল। তা নিয়ে গগৈ বলেন, ‘‘ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবেদন জানানোর সুযোগ ছিল। যে জমিতে উচ্ছেদ হয়েছে অতীতে সেই জমি বন বিভাগের ছিল না। সংরক্ষিত এলাকার আয়তন বাড়ানোয় ওই জমি কাজিরাঙার মধ্যে ঢোকে।’’
ওই ঘটনার জেরে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তিনি নিহতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা ও জখমদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। শিল্প ও পরিবহণমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি জানান, জমির প্রকৃত মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু জবরদখলকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় না। বহিরাগতরা উত্তেজনা ছড়ায়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আজকের ঘটনার তদন্ত করবে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব রাজীব বরা কমিশন। তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হবে। শিল্পমন্ত্রী আরও জানান, ময়না তদন্তে দু’জনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। কিন্তু উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় আপোস করা হবে না। প্ররোচনাদাতাদের শাস্তি দেওয়া হবে।
সরকারের দাবি, উচ্ছেদ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা চলছে। আন্দোলনে উস্কানি দেওয়ার অখিলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে নগাঁও জেলা প্রশাসন। অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, পাট্টা থাকা জমির মালিকদের আগেই ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা তা মেনেও নেন। প্রকৃত অসমবাসীরা অরণ্য সংরক্ষণের স্বার্থে উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় সহমত ছিলেন।
এ দিকে এ দিন উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলি কাজিরাঙার আশপাশে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় তাবু করে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ক্ষতিপূরণ না পেলে তাঁরা রাস্তা থেকে হঠবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy